গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ বস্তাভর্তি বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাচারসহ অবৈধ ভাবে পোড়ানোর ভিডিও ধারন ও ছবি তোলায় শনিবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার-কর্মচারী কর্তৃক ১০জন স্থানীয় সাংবাদিককে প্রায় ২ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ ওই সাংবাদিকদেরকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। ঘটনার বিচারের দাবিতে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। জানাগেছে, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সূত্রে গৌরনদীর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে খবর আসে যে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার-কর্মচারীদের যোগসাজসে বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ পাচার হচ্ছে ও কিছু ঔষধ অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে। এরপর স্থানীয় সংবাদকর্মীরা দ্রুত সেখানে ছুটে যান। তখন তারা দেখতে পান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ তাদের বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগী মিলে কয়েকটি বস্তা ভর্তি সরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়াটারের পাশে একটি নির্জন স্থানে ফেলে বেশ কিছু ঔষধ পোড়ানো হচ্ছে। সংবাদকর্মীরা এর ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে গেলে তখন ডাক্তার-কর্মচারীরা বেশ কিছু সরকারি ঔষধ সেখানে ফেলে পালিয়ে যায়। এর ভিডিও ধারন ও ছবি তোলা শেষে সংবাদকর্মীরা ওই এলাকা ত্যাগ করতে গিয়ে দেখেন ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা বের হতে পারছেনা। সাংবাদিকদেরকে আটকে ফেলা হয়েছে বুঝতে পেরে সেখানে থাকা ১০জন সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানান ও ফেইসবুক লাইভে এসে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ ও এলাকাবাসীর কাছে আবেদন জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ এ সময় তার কোয়াটারের বাসায়ই ছিলেন। সাংবাদিকরা মুক্ত হতে তার মোবাইল ফোনে কল দেন। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ নিয়ে গিয়ে ডাক্তার কোয়াটারের গেট খোলার নির্দেশ দেন। তাকে দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করিয়ে রেখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ গেটের তালা খুলে দেন। ফলে ঘটনার প্রায় ২ঘন্টা পর আটকে রাখা সংবাদকর্মীরা মুক্ত হন। এরপর ইউএনও’র নির্দেশে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার কোয়ার্টার ও আসপাশের এলাকা তল্লাশী চালিয়ে কোয়াটারের পাশের ঝোপ ও ঝাড়ের ভেতর থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া বস্তাও কার্টন ভর্তি বিপুল পরিমান সরকারি ঔষধ ও ইনজেকশন জব্দ করেন। যেগুলোর গায়ে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ লেখা রয়েছে। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার শতাধীক সাধারন মানুষ ও সংবাদকর্মীরা ওই রাতে সেখানে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবিতে ইউএনও’র সামনে মিছিলসহকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে রাত ১টার দিকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত হয়ে ঘরে ফেরেন। একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটিকে ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসকগন নিজেদেরকে বাঁচাতে ষ্টোর কিপার ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ওপর ঘটনার দ্বায় চাপাচ্ছেন। আটকের শিকার সাংবাদিক মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, কাজী আল আমীন দাবি করেন, ঘটনার সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার সরাসরি জড়িত। তারা বলেন, ওনাদের দু জনের নির্দেশে ডাক্তার কোয়াটারের দুটি গেটে তালা দিয়ে আমাদেরকে আটকে রাখা হয়। সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ষ্টোর কিপার ডেট ওভার কিছু ঔষধ পুড়িয়ে ফেলেছে। পাচার করা বস্তাভর্তি ডেট থাকা সরকারি ঔষধ উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের আটকে রাখার ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুরো ঘটনার দায়ভার ষ্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের উপর চাঁপিয়ে দিয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার নিজেকে নির্দোষ সাজানোর চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের ধারন করা ভিডিও ফুটেজে ঔষধ পাচার ও পোড়ানোর ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সংবাদকর্মীদেরকে আটকে রাখার খবর পেয়ে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু সরকারি ঔষধ জব্দ করা হয়েছে। যার অধিকাংশরই ডেট আছে। প্রাথমিক তদন্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, শনিবার দিবাগত রাত ৮টা ২৩ মিনিটের দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ট্রলি ভর্তি করে ঔষধের কার্টনগুলো বাহিরে নেয়া হয়েছে। পুরো ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করাসহ এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply